ব্রিটেনে বাংলাদেশী
একদিকে সবচেয়ে দরিদ্র কমিউনিটি, অন্যদিকে লুটের অর্থে প্রাসাদ গড়ছেন অনেকে
- আপলোড সময় : ১১-১১-২০২৪ ০৩:৫৩:৪৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-১১-২০২৪ ০৩:৫৩:৪৯ অপরাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে প্রকাশিত ইনকাম ইনইকুয়ালিটি ইন ইউকে প্রতিবেদনের ২০২৪ সালের সংস্করণে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, জাতিগোষ্ঠী বিবেচনায় দেশটির অভিবাসী ও স্থানীয় কমিউনিটিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করে ভারতীয় ও চীনারা। সবচেয়ে কম আয় করে পাকিস্তানি ও বাংলাদেশীরা। সেখানে ভারতীয়রা প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৭০০ পাউন্ড আয় করেন। আর বাংলাদেশীরা আয় করেন গড়ে ৪১৬ পাউন্ড। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে চীনারা গড়ে ৬৪৩ পাউন্ড, শ্বেতাঙ্গরা ৬৩৫, শংকর জাতিগোষ্ঠী ৬২৭, এশীয় অন্যরা ৫৫৩, কৃষ্ণাঙ্গরা ৫৪৭, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী ৫৪২ ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতরা ৪২৩ পাউন্ড আয় করে।
দেশটিতে অবস্থানরত অভিবাসীরা বলছেন, বিনিময় হার বিবেচনায় এ অংক বেশি শোনালেও দেশটিতে জীবনযাপনের ব্যয় অনেক বেশি। বিশেষ করে বাংলাদেশীদের অনেকেই এখন সেখানে বাস করছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। যেমন আবাসন ব্যয় পরিশোধের পর সপ্তাহে বাংলাদেশীরা ৩০৪ পাউন্ড ও পাকিস্তানিরা ৩৪৫ পাউন্ড খরচ করতে পারে।
খানাভিত্তিক মূল উপার্জনকারী ব্যক্তির তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এ প্রতিবেদনে উঠে আসে, দেশটিতে অবস্থানরত জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক কমিউনিটিগুলোর মধ্যে আয়বৈষম্য এখন অনেক বেশি। এমনকি কমিউনিটিগুলোর মধ্যেও বড় মাত্রায় আয়ের বৈষম্য দেখা যায়। জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক আয়বণ্টন বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশটিতে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রায় ৪৩ শতাংশেরই অবস্থান সর্বনি¤œ আয় শ্রেণীতে।
দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী এ ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের বড় একটি অংশ প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী। সেখানে গিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করতেই তাদের জীবনের বড় একটি সময় ব্যয় হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক সিআর আবরার বলেন, যুক্তরাজ্যে যারা যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই ওখানে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কাজ করেন। সেখানে ভারতীয় রেস্টুরেন্ট আছে, বাংলাদেশীদের রেস্টুরেন্ট আছে। বাংলাদেশীদের আয়ের বড় উৎস এটি। সেখানে তাদের আয় যে খুব বেশি তেমন নয়। তবে বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। সে কারণে তারা সেখানে থেকে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যে যাওয়া এ প্রথম প্রজন্ম কষ্ট করছে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মে গিয়ে হয়তো এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রভাবশালী-প্রতাপশালী যারা সেখানে এখান থেকে পাচারকৃত অর্থ বিনিয়োগ করে সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তারা একদিকে যেমন সেখানকার নাগরিকত্বের অপব্যবহার করেছেন, অন্যদিকে এখানকার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছেন। এখন এগুলো লোকসম্মুখে চলে এসেছে। এখন প্রয়োজন হচ্ছে, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে আসা।
আবার এর উল্টোচিত্রও রয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির সর্বোচ্চ আয় শ্রেণীতে অবস্থান করছে বাংলাদেশী কমিউনিটির ৮ শতাংশ।
২০১৬ সাল থেকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ একাই যুক্তরাজ্যে ৩৬০টি বাড়ি ক্রয় করেছেন। বাড়ি ক্রয়ের এসব অর্থ বাংলাদেশের বাইরে থাকা বৈধ ব্যবসা থেকে নিয়ে এসেছেন বলে সেখানে জানিয়েছেন তিনি। যদিও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কোনো রাজনীতিবিদের দেশের বাইরে স¤পদ থাকলে তা হলফনামায় উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দেশের বাইরে থাকা স¤পদ স¤পর্কে কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে।
আলজাজিরা ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন কিছুদিন আগে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই ইউনিটের রিসার্চ অ্যানালিস্ট জুলকারনাইন শায়ের সামি গণমাধ্যমকে বলেন, ব্রিটেনে যারা বিনিয়োগ করছে, তাদের বড় সংখ্যকই এখানকার স্থানীয়। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মতো এমন ঘটনা এখানে খুবই কম। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা দুই-তিন প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাস করছেন। তাদের অনেকেই এখানে স¤পদ করেছেন, বিনিয়োগ করেছেন, কিন্তু সেটা সাইফুজ্জামান চৌধুরীদের মতো করে নয়।
তিনি বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর একার ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ডের স¤পদের খোঁজ পেয়েছি আমরা। সালমান এফ রহমানের ভাই ও ছেলেরও স¤পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের স¤পদ পাওয়া গেছে। তাদের কারোরই এখানে ব্যবসা নেই। কিন্তু তারা দুবাইসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে টাকা নিয়ে এসেছেন। এগুলো অস্বাভাবিক বিষয়।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসন এলাকাগুলোর অন্যতম লন্ডনের মেফেয়ার। এখানে বিলাসবহুল বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেফেয়ার প্রপার্টিজের কাছ থেকে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন এক বাংলাদেশী। মেফেয়ার এলাকার গ্রসভেনর স্কোয়ার এখন বিশ্বের বৃহৎ ধনকুবেরদের কাছেও অনেক ঈপ্সিত একটি জায়গা। গত কয়েক বছরে এখানে বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন ডজন খানেক বাংলাদেশী। বাড়িগুলোর মতো তাদের বিলাসবহুল দামি গাড়িও ঈর্ষান্বিত করে তুলছে সেখানকার বাসিন্দা স্থানীয় ও বিদেশী ধনকুবেরদেরও।
গত দেড় দশকে যুক্তরাজ্যের গোটা প্রপার্টি বাজারেই বাংলাদেশীদের উপস্থিতি বেশ জোরালো হয়েছে। এ তালিকায় অফশোর প্রপার্টি হিসেবে বেনামে নিবন্ধিত স¤পত্তির পাশাপাশি বাংলাদেশের ঠিকানায় নিবন্ধনকৃত প্রপার্টিও রয়েছে অনেক। ব্রিটিশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালের জানুয়ারিতেও যুক্তরাজ্যের আবাসন খাতে স¤পত্তি মালিকের বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধিত প্রপার্টির সংখ্যা ছিল ১৫। ছয় বছরের মাথায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২-তে। ২০২১ সালের আগস্টের মধ্যেই এ সংখ্যা দাঁড়ায় দ্বিগুণেরও বেশিতে - মোট ১০৭। বর্তমানে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সেখানকার প্রবাসীরা। ব্রিটিশ সরকার ও প্রপার্টি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলো এ-সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করলেই প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যাবে।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগকারী কোটায় অনেকেই পাড়ি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যে। ‘টিয়ার-১ ইনভেস্টর’ শ্রেণীতে ২০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করলেই যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছর থাকার অনুমতি পেতেন বিদেশীরা। এরপর তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসেরও আবেদন করতে পারতেন। দুই বা তিন বছরের মধ্যেই স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেতে হলে বিনিয়োগ করতে হতো যথাক্রমে ১ কোটি ও ৫০ লাখ পাউন্ড। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। যদিও ইনোভেটর ভিসা ও স্কেল-আপ ভিসা ক্যাটাগরিতে বিনিয়োগভিত্তিক অভিবাসনের সুযোগ এখনো রয়ে গেছে। এ ধরনের ক্যাটাগরিতে যুক্তরাজ্যে যাওয়া ব্যক্তিরাই প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোয় প্রপার্টির বড় ক্রেতা বলে সেখানে বসবাসরত অভিবাসী বাংলাদেশীরা জানিয়েছেন।
লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় অন্তত অর্ধশত বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারের বাড়ি কেনার সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে গণমাধ্যম। এ তালিকায় দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নির্বাহীর পাশাপাশি রয়েছে ব্যাংকের মাঝারি স্তরের কর্মকর্তার নামও। অভিযোগ রয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ বা মালিকপক্ষের যোগসাজশে ওইসব কর্মকর্তা ব্যাংকের অর্থ লুণ্ঠনের পথ সুগম করে দেন। এর বিনিময়ে ফুলেফেঁপে উঠছে তাদের অর্থবিত্ত।
এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। ঋণের নামে অর্থ লোপাটে ব্যবসায়ীদের সহযোগী ছিলেন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরাও। যুক্তরাজ্য ও ঢাকার একাধিক সূত্রের তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অন্তত তিনজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) যুক্তরাজ্যে বাড়ি রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ডজন খানেক সাবেক এমডির যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে প্রপার্টি রয়েছে। যুক্তরাজ্যে প্রপার্টি কিনেছেন বেসরকারি ব্যাংকের অনেক চেয়ারম্যান-পরিচালকও। তবে এদিক থেকে অন্যদের চেয়ে বেশ এগিয়ে তৈরি পোশাক খাতের বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা। খাতটির শতাধিক ব্যবসায়ীর লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বাড়ি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ব্যবসা পরিচালনা করছেন এমন একজন ব্যবসায়ী বলেন, যুক্তরাজ্যের অভিজাত সব এলাকায় বাংলাদেশীদের বাড়ি কেনার সংবাদ আমরা প্রতিনিয়ত শুনছি। তবে কী প্রক্রিয়ায় বা কোন টাকায় সেসব বাড়ি কেনা হচ্ছে, সেটি অজ্ঞাত। দীর্ঘদিন এ দেশে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছি। কিন্তু কখনো ওইসব অভিজাত এলাকায় বাড়ি কেনার কথা ভাবিনি। যুক্তরাজ্যে মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচার আইন খুবই কঠোর। এ দেশে একটি ব্যাংক হিসাব চালু করতে হলেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু কীভাবে বাংলাদেশীরা যুক্তরাজ্যে স¤পদ এনে বাড়ি বা স¤পত্তি কিনছেন সেটিও একটি বিস্ময়। এখানেও কিছু মধ্যস্থতাকারী বা দালাল আছে, যারা বিভিন্ন দেশ থেকে স¤পদ পাচারের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনীদের বিনিয়োগ কোটায় অভিবাসনসংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে লন্ডনভিত্তিক অ্যাস্টনস। সংস্থাটি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের বিভিন্ন এলাকার বিদেশী প্রপার্টি ক্রেতাদের জাতীয়তাভিত্তিক একটি তালিকা প্রকাশ করে। ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট ও প্রপার্টি ব্যবস্থাপনা সংস্থা নাইট ফ্রাঙ্ক ও যুক্তরাজ্য সরকারের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি করা ওই তালিকায় দেখা যায়, ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের বিদেশী প্রপার্টি ক্রেতাদের তালিকায় বাংলাদেশীদের অবস্থান ছিল নবম। ওই নয় মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনে ৯৮টি লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ড মূল্যের প্রপার্টি কিনেছেন বাংলাদেশীরা। তৎকালীন বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এসব লেনদেনে গড় ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ লাখ পাউন্ড (প্রায় ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা)।
ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান দ্য সেন্টার ফর পাবলিক ডাটার পর্যবেক্ষণ হলো প্রপার্টি বাজারে স¤পত্তির মূল্যবৃদ্ধির বড় একটি কারণ বিদেশী ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০১০ সালের পর দেশটিতে বিদেশের ঠিকানায় নিবন্ধিত প্রপার্টির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এর তিন-চতুর্থাংশই মূলত ২০টি দেশ ও অঞ্চলের ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধিত। এ ২০ অঞ্চলের মধ্যে আবার জার্সি, গার্নসে, আইল অব মান ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো ব্রিটিশরাজ শাসিত অঞ্চলের আধিপত্য বেশি দেখা যায়। ব্রিটিশরাজ শাসিত এসব অঞ্চল আবার গোটা বিশ্বেই স¤পদ পাচারকারীদের বেনামে অফশোর প্রপার্টি কেনার জন্য স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে সরকার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য যেটুকু সুবিধা দেয়, সেখান থেকে আবাসন খাতে বিনিয়োগ সম্ভব নয়। এ কারণে এখানকার অতি ধনী, রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীরা যুক্তরাজ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলেও তা অবৈধভাবে দেশ থেকে পাচার হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি অনেক কঠিন, জটিল এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ), বিএফআইইউ এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। প্রথমত, এটা যে ক্রাইম হয়েছে, তা প্রমাণ করতে হবে এবং আদালতের নির্দেশে টাকা পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আদালতের নির্দেশের পর সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে আইনি সহায়তার চুক্তি করতে হয়। এর সংশ্লিষ্ট দেশের স¤পদের মালিক যারা সেখানে তদন্ত করতে হবে। যেমন ইংল্যান্ডে যারা স¤পদের মালিক হয়েছে, ইংল্যান্ডের সরকারকে তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে হবে। আদালতে প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। এর জন্য সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং বর্তমান সরকারের সে সদিচ্ছা আছে। প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে এটা চট করে হবে না। পাচার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও এর সংঘবদ্ধ চক্র আছে। এ চক্র স¤পদ ক্রয়, জমা, বিনিয়োগে পাচারকারীদের সহযোগিতা করে। এর বিনিময়ে তারা অর্থও আদায় করে। সেটি তো আবার সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। -বণিক বার্তা
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ